সর্বাধুনিক রুশ হেলিকপ্টারে চড়ছিলেন বিপিন, তবুও ভাঙল কেন?
০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:১৯ পিএম

এমআই-১৭ভি৫
হেলিকপ্টার এমআই-১৭ভি৫ রাশিয়ায় তৈরি এবং উন্নততর সংস্করণ। ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান বিপিন রাওয়াতসহ ১৪ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এই হেলিকপ্টারটি। হেলিকপ্টারটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম। এটি উদ্ধার অভিযানে যেমন নির্ভরশীল একটি বাহন, তেমনই যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর সঙ্গে লড়তেও সক্ষম। সবার মনে প্রশ্ন জাগছে তাহলে কিভাবে বা কোন কারণে দুর্ঘটনার শিকার হলেনিএই কপ্টারটি।
ভারতীয় সমরাস্ত্র বিশারদরা বলছেন, এই হেলিকপ্টারটি অত্যন্ত উন্নতমানের। এটি ভারতীয় বিমানবাহিনীর অন্যতম ভরসাযোগ্য একটি হেলিকপ্টার। ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের সর্বোচ্চ পদধারী বিপিন রাওয়াতকে নিয়ে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করেই উড়ার কথা হেলিকপ্টারটির। তবুও কেন এটি জঙ্গলে ভেঙে পড়ল? এ নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে।
দুর্ঘটনাটি কেন ঘটল এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে প্রাথমিক কয়েকটি কারণের কথা বলা হচ্ছে। খারাপ আবহাওয়া এর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিছু সূত্র বলছে, দুর্ঘটনাস্থলটি কুয়াশায় ঢাকা ছিল। এতে পাইলট পরিষ্কার দেখতে পাননি। এমআই-১৭ভি৫ এর সাবেক পাইলট অমিতাভ রঞ্জন একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন। তিনি মনে করেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে। আকাশ পরিষ্কার না থাকায় পাইলটকে হেলিকপ্টারটির গতিবিধি ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
তবে অমিতাভ রঞ্জন যান্ত্রিক গোলযোগের কারণটিকেও তার সন্দেহের তালিকায় রাখছেন। যদিও পাইলটের দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলেননি তিনি। তার মতে, হেলিকপ্টারটি নতুন ছিল না, তাই এটির পাইলট যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্তই ছিলেন।
ভারতের বিমানবাহিনীর প্রাক্তন গ্রুপ ক্যাপ্টেন রমেশকুমার দাসের মতে খারাপ আবহাওয়া দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তবে অন্যান্য কারণও এখনই উড়িয়ে দেওয়া যাবে বলে মত দেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারকে রমেশ বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই তামিলনাড়ুর আবহাওয়া খারাপ। নীলগিরি পাহাড়ে আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে যায়। হেলিকপ্টার টেক-অফ করার পর হয়তো আবহাওয়া খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তাই খারাপ আবহাওয়ার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে বিপিন যে হেলিকপ্টারটিতে চড়ছিলেন তা চালাচ্ছিলেন অভিজ্ঞ পাইলট। পাহাড়ি এলাকায় যে এমনটা ঘটে থাকে তা পাইলটরা ভালোকরেই জানেন। এছাড়া উচ্চপদস্থ কাউকে বহনের জন্য বহরের সবচেয়ে নিরাপদ ও উন্নত বাহনটি ব্যবহার করা হয়। বাহনটির একাধিক নিরাপত্তা পরীক্ষাও করা হয়। এত কিছুর পরেও খারাপ আবহাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় বলে মনে করেন প্রাক্তন ক্যাপ্টেন রমেশ।
যে হেলিকপ্টারটি বিপিন রাওয়াতকে বহন করছিল সেটি অত্যন্ত আধুনিক হলেও অতি উচ্চতায় অসুবিধায় পড়ে থাকে। তাই উচ্চতাও একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু যেখানে কপ্টারটি ভেঙে পড়ে তার উচ্চতা অবশ্য বেশি ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
জানা গেছে, রাওয়াতের হেলিকপ্টারটি সর্বাধিক ২৪ জন আরোহীকে নিরাপদে বহন করতে সক্ষম। এর মোট ওজন বহনের ক্ষমতা সাত হাজার কেজি। এই মডেলের হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনী। গাড়িসহ ভারী বস্তু বহন করে থাকে এ হেলিকপ্টার। দুর্ঘটনার সময় বিপিনসহ ১৪ জনকে বহন করছিল হেলিকপ্টারটি। ফলে ওজনের কারণে এটি ভেঙে পড়েছে এমন সন্দেহ করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া হেলিকপ্টারটি সরাসরি যুদ্ধ করতেও সক্ষম। শত্রুর হামলা মোকাবিলার পাশাপাশি আক্রমণ করতেও সর্বদা প্রস্তুত থাকে এ মডেলের হেলিকপ্টার। মাওবাদী দমন অভিযান অপারেশন গ্রিন হান্টে ২০০৯ সালে এই কপ্টারই ব্যবহার করা হয়েছিল।
ও/এফ