সন্তানদের খুশির জন্যই ফুটপাতে ভাত বিক্রি করেন খুশি!
০৫ জুলাই ২০১৮, ০৪:১৬ পিএম

ছবি-সংগৃহীত
মায়ের মতন আপন কেউ হয়না,সন্তানে খুশির জন্য কি না করে থাকেন মা।
তেমনি একটি ঘটনা তুলে ধরা হলো রাজশাহীর খুশি বেগম কে নিয়ে!
রাজশাহী নগরীর টিকাপাড়া এলাকার খুশি বেগম। স্বামীর নির্যাতনে বাধ্য হয়ে তালাক মেনে নিয়েছিলেন।
সংসারে তার দুই ছেলে মেয়ে।
সংসার চালাতে এক পর্যায়ে ফুটপাতে ভাত বিক্রি শুরু করেন খুশি। বর্তমানে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি দুই সন্তানের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন এই উপার্জন দিয়েই। খুশি বেগমের মেয়ে সোনিয়া টিকাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এবং ছেলে মীম একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
নিজ সংগ্রামের কথা তুলে ধরে খুশি বেগম প্রতিদিনের চিএকে বলেন, ১৪ বছর আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের প্রথম দুই বছর ভালোই চলছিল। এরপর শুরু হয় অশান্তি। অন্য নারীর পাল্লায় পড়ে স্বামী আমাকে প্রায়ই মারধর করত। নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু স্বামী আবারও নিয়ে আসে। এরপর আবারও নির্যাতন শুরু হয়। এভাবে কিছুদিন চলার পর আমাকে তালাক দেয় স্বামী। দু'টি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করিনি। তালাকের পর বাবার বাড়িতে থাকি প্রায় দুই বছর।
সেইসব দিনের কথা মনে করে খুশির চোখ ছলছল করে ওঠে। তিনি বলতে থাকেন, এর কিছুদিন পর বাবা মারা যান। বুড়ো মা আর কতোদিন চালাবেন। মায়ের ঘাড়ের বোঝা না হয়ে নেমে পড়ি কাজের সন্ধানে। এক বছর মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছি। পরে সপুরায় বিসিক শিল্প এলাকার একটি কারখানায় চার বছর কাজ করছি। মাসে আড়াই হাজার টাকা বেতন দিত। এরপর আরেকটি কারখানায় তিন হাজার টাকা বেতনে পাঁচ বছর কাজ করি। কিন্তু ওই টাকায় সংসার চলতো না। পরে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার নেই। ওই টাকা দিয়ে কুমারপাড়ায় ফুটপাতের এই দোকানটি ভাড়া নিই।
নগরীর সাহেব বাজার জামাল সুপার মার্কেটের পূর্বপাশের ফুটপাতে খুশি বেগমের হোটেল। ঝুপড়ি ঘরের এই হোটেলে খাবারের দাম খুবই কম। ১০ টাকা প্লেট ভাতের সঙ্গে এখানে পাওয়া যায় ২০ টাকায় মুরগি, ১৫ টাকায় মাছ ও ৫ টাকায় সবজি। এ কারণে এখানে নিম্নআয়ের মানুষ- বিশেষ করে রিকশাচালক, আটোরিকশা চালক ও রাজমিস্ত্রীরা খেতে আসেন। প্রতিদিন চার কেজি চালের ভাত বিক্রি হয় খুশির দোকানে। রোজ দেড়শ' টাকা দোকান ভাড়া দিতে হয় তাকে। সব খরচ বাদ দিয়ে দিন শেষে খুশির লাভ থাকে ২০০ টাকা।
খুশির দোকানে খেতে আসা রিকশাচালক আবুল কালাম বলেন, এই হোটেলে সস্তায় মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়। তাই এখানে খেতে আসি। বড় হোটেলে একবেলা খেতে গেলে কমপক্ষে ১০০ টাকা লাগে। আর খুশির হোটেলে ৩০ টাকায় ভাত-মাংস পাওয়া যায়।
নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে খুশি বেগম বলেন, আমার মেয়ে সোনিয়ার পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছা। দুই সন্তান বড় কিছু হবে, সেই আশায় ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে কষ্ট করে যাচ্ছি। আল্লাহ-ই জানেন, ওদের পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করতে পারবো কিনা