শিশু পাচার বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত: অধিকার কর্মী

প্রতিদিনেরচিত্র ডেস্ক

২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:২৩ পিএম


শিশু পাচার বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত: অধিকার কর্মী

মানব পাচার এর মতো মানবতা বিরোধী অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে শিশু সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এতে করে পাচার বিরোধী কার্যক্রম বিশেষ করে শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে বলে অধিকার কর্মীরা মনে করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পাচারের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু।
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পিসিটিএসসিএন কনসোর্টিয়াম এর পক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আলোচনাকালে অধিকার কর্মীরা বলেন যে, উক্ত বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করা সহজতর হবে।

তাদের মতে, শিশু সুরক্ষা হলো শিশুকে যে কোনো ধরণের নির্যাতন (যেমন- শারিরীক, মানসিক ও যৌন) থেকে রক্ষা করা।
শিশুকে সবধরণের শোষণ/নিপীড়ন থেকে রক্ষা করা, অবহেলা, পাচার ও রুঢ় আচরণ থেকে রক্ষা করা, শিশুর সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং শিশু বিকাশের ক্ষেত্রে সুষ্ঠ পরিবেশ তৈরী করাও শিশুদের সুরক্ষায় অন্তভর্’ক্ত।
যেসব শিশুরা জরুরীভিত্তিতে সুরক্ষার আওতায় আসা উচিত তাদের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে বক্তারা বলেন যে, যেসব শিশু অসহায়, অধিকার বঞ্চিত, পিতা-মাতাহীন, বসতি ও রাস্তায় বস-বাসকারী শিশু- যারা শারিরীক, মানসিক ও যেীন নির্যাতন ও পাচারের শিকার হতে পারে বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেই ধরণের শিশুর জন্য সুরক্ষা প্রয়োজন।
যে সকল শিশু শারিরীক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ও পাচারের শিকার হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
আমাদের দেশে শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু আইন রয়েছে যেমন, শিশু আইন ২০১৩, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩), বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯, জন্ম নিবন্ধন আইন ২০০৪, পারিবারিক সহিংসতা (সুরক্ষা ও প্রতিরোধ) আইন ২০১০, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২, পর্নোগ্রাফী আইন ২০১৩, যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্টের প্রদত্ত গাইডলাইন ২০০৯, শ্রম আইন ২০০৬, প্রতিবন্ধী আইন ২০১৩, পারিবারিক

আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫, পেনাল কোড ১৮৬০, ফেৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮, এসিড দমন আইন ও এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ ও গার্ডিয়ান এন্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট ১৮৯০।
তাছাড়া, এই সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কিছু আইন রয়েছে যেমন, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ (১৯৮৯),  নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সনদ (সিডো) ১৯৯৯,  জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অপশোনাল প্রটোকল, সার্ক কনভেনশন, শিশুর প্রত সহিংসতা বন্ধে দক্ষিণ এশিয়ার পদক্ষেপ (সাইভাক),  নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অশোভন ব্যবহার অথবা শাস্তিদান বিরোধী সনদ ১৯৮৪।
শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলো হলো: শিশু আইন ২০১৩, জাতীয় শিশু নীতি ২০১১, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল এ শিশুদের বিষয় অন্তর্ভুক্তিকরণ, পিআরএসপি-২ (২০০৯-২০১১), জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা ২০১০ ও পাচার বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা।
প্রিভেনশন অফ চাইল্ড ট্রাফিকিং থ্রু স্ট্রেনদেনিং কম্যুনিটি এন্ড নেটওয়ার্কিং (পিসিটিএসসিএন) কনসোর্টিয়াম এর অন্যতম সদস্য সংগঠন ’কম্যুনিটি পার্টিসিপেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিডি) এর মতে, উক্ত আইন ও বিষয়গুলো বাস্তবায়নের লক্ষে সংশ্ল্ষ্টি সকলে এগিয়ে আসলে আমাদের দেশে শিশু সুরক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে।
পিসিটিএসসিএন কনসোর্টিয়াম মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের বিদ্যমান কাঠামোতে নারী ও শিশু পাচারকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানে সংশ্ল্ষ্টি মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে তথ্য উপাত্ত সরবরাহ ও নিয়মিত সভা, কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন করে আসছে।
পিসিটিএসসিএন কনসোর্টিয়াম এর সদস্য সংগঠনসমূহ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নারী ও শিশু কেন্দ্রীক উন্নয়ন কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কমিটির সাথে কাজ করছে ও সমাজের প্রতিটি প্রক্রিয়ায় শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে আসছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, শিশু আইন ২০১৩, মানব পচার দমন ও প্রতিরোধ আইন ২০১২, ও জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী আমাদের দেশে ০ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত সকলেই শিশু বলে পরিগণিত হবে।

Ads