মারমা সম্প্রদায়ে পল্লিতে ব্যাপক প্রস্তুতি
১১ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:০৭ পিএম

বান্দরবানে লামা উপজেলায় মারমা স¤প্রদায়ের ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ উৎসবে জাক-জমক প্রস্তুতি পাহাড়ে বিভিন্ন পল্লীগুলোতে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রবারণা পূর্ণিমা দিনকে ঘিরে লামায় রবিবার (১৩ অক্টোবর) থেকে তিন দিনব্যাপী ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ উৎসব শুরু হবে।
উৎসবে জাক-জমকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে পাহাড়ে মারমা সম্প্রদায়রা। পূর্ণিমা দিন প্রতিটি কেয়াং (বিহার) ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর পল্লি গুলোতে ফানুস উড়ানো সহ নদীতে হাজারো প্রদ্বীপ প্রজ¦লন, রথযাত্রা, পিঠা তৈরী প্রতিযোগীতা সহ নানান কর্মসূচীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
লামা মাহামুণি ও উপজেলা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার মাঠে পূর্ণিমা দিন রবিবার আকাশ (স্বর্গ) চুলামণি চৈত্য (জাদি) কে বন্দনার জন্য ‘‘ফানুস’’ উড়ানো, নুনারবিল পাড়া হতে নদীতে হাজার প্রদ্বীপ প্রজ্বলন এবং ময়ুর ও পেগুদা আকৃতির গজালিয়া গাইন্ধ্যা পাড়াতে সোমবার রথযাত্রায় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল। অনুষ্ঠানস্থল ছাড়াও আশপাশের ক্যায়াং এবং মারমা পল্লিগুলো থেকে গৌতম বুদ্ধের চুলামণি চৈত্য বন্দনা করতে রংবেরঙের শতশত ফানুস বাতি আকাশে উড়ানো হবে।
লামা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের উদযাপন কমিটির আহবায়ক ক্যজ্য মার্মা জানান, ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ উৎসব হচ্ছে মারমা স¤প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবে এবারো ৩ দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে রথযাত্রা, হাজার প্রদ্বীপ প্রজ্বলন, পিঠা তৈরি প্রতিযোগিতা, ফানুস বাতি উড়ানো, পঞ্চশীল গ্রহণ, ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মারমা বা রাখাইন পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বড়–য়া, ম্রো, চাকমা, তঞ্চঙ্গারাও এ উৎসবে পালন করে থাকে। এর পাশাপাশি উপজেলার ফাঁিসয়াখালী, আজিজনগর, ফাইতং, সরই, গজালিয়া, রূপসীপাড়া, লামা সদর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দির ও পল্লী গুলোতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের প্রস্তুতি খবর পাওয়া গেছে।
গজালিয়া ইউনিয়নের উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক উশৈঞ্য মার্মা (জয়) জানান, এবারে উপজেলা প্রবারণা উৎসব সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হবে গজালিয়া গাইন্ধ্যা পাড়াতে। অনুষ্ঠানে হেডম্যান পাড়া, বড় বমু হেডম্যান পাড়া, ডেঙ্গিছড়া, বাইশপাড়ি এলাকার থেকে রথ এসে গ্যাইন্ধ্যা পাড়াতে লোক সমাগম হবে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানায়, তিন মাস বর্ষাবাস (উপোস) থাকার পর পাহাড়ি মারমা স¤প্রদায়ের লোকজন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে প্রতি বছর।
এই পূর্নিমায় ফানুস উড়ানোর মূল উদ্ধেশ্য হল, রাজপুত্র সিদ্ধার্থ (গৌতম) জগৎ সংসারের মায়া-মোহ ছেড়ে, দুঃখ মুক্তি পথের সন্ধানে ২৯ বছর বয়সে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় কপিলাবস্তুর রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন সন্ন্যাসীর পোশাক পরিধান করেন। এসময় সিদ্ধার্থ আপন তরবারি দিয়ে মাথার চুল কেটে সত্যক্রিয়া অধিষ্ঠান করেন- ‘আমি যে উদ্দেশ্যে সংসারধর্ম ত্যাগ করে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহন করছি সে উদ্দেশ্য যদি পূর্ণ হয় অর্থাৎ ভবিষ্যতে বুদ্ধত্ব লাভ করতে পারি- তাহলে আমার কর্তিত চুলগুচ্ছ নিচে না পড়ে উর্ধ্বে আকাশে উড়ে যাবে....।’ সত্যি সত্যিই তার চুল উর্ধ্বে উত্থিত হয়। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দৃঢ় বিশ্বাস সে পবিত্র চুল আজও আকাশে ভাসমান আছে। শাস্ত্রে আছে দেবরাজ ইন্দ্র পবিত্র চুল রাশি সংগ্রহ করে আকাশ (স্বর্গ) চুলামণি চৈত্য (জাদি) নির্মাণ করে দেন। সে চুলামণি চৈত্যকে বন্দনার জন্যই ‘‘ফানুস’’ উড়ানো হয়।