ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচন কোন দোলাচলে?
২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ০৬:৫৮ পিএম

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সুযোগ্য মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে মেয়র পদে নির্বাচন জরুরি মনে করছে সব মহল। বাংলাদেশ সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ এ উল্লেখ আছে ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ অতএব আমরা যদি সংবিধানের নির্দেশনা অনুস্মরণ করতে চায় সেক্ষেত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে জনপ্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করা অত্যাবশ্যক। আর এই নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ওয়াদাবদ্ধ যে ‘International Covenant on Civil and Political Rights’ ও ‘সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ’ এ দুটি সংস্থায় আমরা স্বাক্ষর করেছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের এসব আন্তর্জাতিক আইন এবং চুক্তি মেনে চলা প্রয়োজন। সংবিধানে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির আগে এই উপ-নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে জন্য নির্বাচন কমিশন গত ৯ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনসহ সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। কিন্তু এখানেও নির্বাচন আইন প্রক্রিয়ার গভীর বাধ্যবাদকতা রয়েছে যা প্রতিপালিত হয়নি।
আইনজীবীরা জানান, গত ৯ জানুয়ারির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। কিন্তু যেখানে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি এবং যিনি প্রার্থী হবেন তিনি জানেন না তিনি ভোটার কিনা এ অবস্থায় মনোনয়ন দাখিল যুক্তিযুক্ত নয়। অন্যদিকে প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে অবশ্যই ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর থাকতে হবে। সুতরাং ভোটার তালিকা প্রকাশ না হলে এটাও সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৫ (৩) উপধারায় লেখা আছে ‘মেয়রের পদসহ কর্পোরেশনের শতকরা ৭৫ভাগ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইলে, কর্পোরেশন এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, যথাযথভাবে গঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।’ এ আইন মতে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি মিলে কাউন্সিলর শতকরা ৭৫ভাগ হয় না। কারণ নতুন এই ১৮টি ওয়ার্ডে নির্বাচনই হয়নি। সে বিবেচনায় মেয়র পদই তো গঠিত হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর হবেন তারা কত দিনের জন্য নির্বাচিত হবেন তার কোন সমাধান নেই। বাস্তবতার এ দুটি কারণে রিট করা হয়েছে বলে মনে হয়।
ভাববার বিষয় আদৌ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে উত্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সম্ভব? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে কিভাবে? এই অবস্থায় সংবিধান অনুসরণ কোন পর্যায়ে থাকবে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। অতপরঃ ‘সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ’ এর সাথে ‘সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯-এর ৫ (৩)’ উপধারার কিভাবে সমন্বয় হবে সংবিধান বিশেষজ্ঞদেরে এখনি নির্ধারণ করা সময়ের উত্তম দাবি।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী আইনী জটিলতার ফাঁকেও ভিতরে ভিতরে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীতে এই সিটি নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই নিয়েছে দুটি দলই। জয়ী হতে পারে এমন স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিবে উভয় দল। বিশেষ করে সাবেক মেয়র আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ভিন্ন ধারার একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করে গেছেন। তার সেই কাজ ও ইমেজের কথা মাথায় রেখেই প্রার্থীর বাছাই করবে প্রধান দুই এ প্রতিদ্বন্দ্বী দল। অতীত বলে কথা, আমাদের স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভিন্নরকম। আমরা লক্ষ্য করেছি বেশ কটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে আবার কিছু নির্বাচন নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী জয়ী বা পরাজিত হয়েছে, সেটি কমিশনের বিবেচ্য বিষয় নয়। তাদের দায়িত্ব ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারেন কিনা, সেটি নিশ্চিত করা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রার্থী তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় সহায়তাও প্রয়োজন। সব শেষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বাংলাদেশের জনগনের প্রত্যাশা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন একজন সৎ ও যোগ্য মেয়র উপহার পাবে এটাই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা।